মেজর অব. আখতার :বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত হলো ত্রিমুখী শক্তি। এ ত্রিমুখী শক্তি কখনই এক বিন্দুতে মিলিত হওয়ার সুযোগ নেই। এক বিন্দুতে মিলিত হওয়ার মানেই হলো অন্য দুই শক্তির বিলুপ্তি যা তিনজনের মধ্যে অন্য দুজনের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি এ ত্রিমুখী শক্তির যে-কোনো দুই শক্তির পক্ষেও এক বিন্দুতে আসা সম্ভব নয়। কারণ এতেও এক শক্তির বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি হবে। এ তিনটিই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক শক্তি। এদের বিকর্ষণে সংঘাত তৈরি করবে। এ তিন রাজনৈতিক শক্তির পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য রয়েছে। ফলে এদের পথ ও মত আলাদা। এ ত্রিমুখী শক্তির কারও পক্ষেই তাদের আদর্শ, মত, নীতি ও লক্ষ্য থেকে কখনই বিচ্যুত হওয়া সম্ভব নয়। হলেই তাদের অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়বে। হয়তো তাদের আদর্শ, মত ও লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে কিছুটা পথ পাশাপাশি চলতে পারে; তা-ও এক বাহনে তো নয়ই, বরং নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিনাশ নিশ্চিত, যা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ সালের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে দেশে অন্যসব রাজনৈতিক শক্তি প্রায় বিলুপ্তির প্রান্তে পৌঁছে যায়। তখন এক নেতা, এক দল ও এক দেশে পরিণত হয় দেশের রাজনীতি। এ রকম একটি ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক শূন্যতায় বিরোধী দলহীন রাজনীতিতে জাসদ নামে যে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ভ্রƒণমোচন হয়েছিল তারা তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ভিত ধসিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। যদিও তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা জাসদকে প্রায় মাটির সঙ্গে সেদিন মিশিয়ে দেয়। সময়ের আগেই ভ্রƒণমোচনকৃত জাসদ তাদের অপরিকল্পিত ও অপরিপক্ব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্বারা সরকারকে কঠোর পথে হাঁটতে সেদিন বাধ্য করেছিল। দুই পক্ষের ভ্রান্ত রাজনৈতিক পদক্ষেপে তাদের নিজেদের সর্বনাশ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। জাসদ ও তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ভিত্তি ও কাঠামো ছিল এক ও অভিন্ন। ফলে তাদের পারস্পরিক সংঘর্ষ ছিল মূলত গৃহবিবাদ বা আত্মকলহ, যা তাদের উভয়ের ব্যাপক সর্বনাশ ইতিহাসে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। জাসদ তাদের ভুল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের কারণে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে। তেমনি জাসদের শিকড় ওপড়াতে গিয়ে তৎকালীন শাসক দল তাদের নিজেদের শিকড়ই উৎপাটিত করে ফেলেছিল। তাই অনেকে মনে করেন, ১৯৭৩-এ জাসদের জন্ম ছিল সময়ের আগে এবং ভ্রƒণমোচনকৃত রাজনৈতিক শক্তি, যার জন্ম ছিল ক্ষমতাসীন রাজনীতির কোষ থেকে। সেদিন জাসদের ঐতিহাসিক ভ্রান্তনীতির কারণে ক্ষমতাসীনদের বিরোধী বিপুলসংখ্যক তরুণ-যুবক আত্মাহুতি দিয়েছিল যা ইতিহাসে মূল্যহীন হয়ে যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিলুপ্তির যে ভ্রান্ত পথ তৎকালীন শাসকরা নিয়েছিল তা প্রকারান্তরে নিজেদের অস্তিস্ত বিপন্ন করে। ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে, বিরোধী পক্ষ বিনাশের রাজনীতি সময়ের আবর্তে ক্ষমতাসীনদের বিলুপ্তিই নিশ্চিত করে। অপেক্ষা শুধু সময়ের। বিনাশ শুধু বিনাশই ডেকে আনে। সেদিন জাসদের বিনাশের রাজনীতি জাসদকে যেমন বিলুপ্ত করেছে তেমনি জাসদকে বিলুপ্ত করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনরাও বিপন্ন হয়েছে, যা ইতিহাসের চরম শিক্ষা।
রাজনীতিতে বিরোধিতা ক্ষমতাসীনদের সমান্তরাল কর্মকাণ্ড। নিউটনের তৃতীয় সূত্র বলে, ‘অ্যাভরি অ্যাকশন হ্যাজ অপজিট অ্যান্ড ইকুয়াল রি-অ্যাকশন’। যার সোজা বাংলা হলো, সব কাজের সমপরিমাণ বিরোধিতা আছে এবং থাকতে হবে। ভারসাম্যের জন্য এটি অতীব প্রয়োজন। কাজেই কাজ করার সময় ভেবেচিন্তে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে করতে হবে, যাতে বিরোধিতার বদলে বিনাশ করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে নিজেদের বিনাশ নিশ্চিত না হয়। সম্ভাব্য বিরোধিতা বিবেচনা করে নিজেদের কর্মসূচি তৈরি করতে পারলে সে কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফলতা শতভাগ নিশ্চিত তার ভূরি ভূরি প্রমাণ ইতিহাসে যেমন আছে তেমনি আমাদের সমসাময়িক রাজনীতিতেও আছে। ১৯৯১-৯৫ সাল পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করা ছিল বিএনপির চরম সফলতা। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল ভেঙে বিরোধীদলীয় নেতার অকালে মৃত সন্তানের পাশে ছুটে যাওয়া ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর মানবতা ও সফলতা। রাজনীতিতে কেউ শেষ ব্যক্তি নয়। ক্ষমতাসীনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আকাক্সক্ষা শুধু দৃশ্যমান বিরোধীরাই রাখে না, চারপাশে ঘিরে থাকা আপনদের মধ্যেও সে আকাক্সক্ষা প্রকট থাকে। প্রতিপক্ষ বিনাশের রাজনীতির সবচেয়ে বেশি সুযোগ নেয় আপনজনরা। প্রকৃতিতে শূন্যতা বলে কিছু নেই। আছে শুধু চাপ। যে চাপ সব সময় বস্তু বা ব্যক্তিকে স্থানান্তরিত করে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চাপ সৃষ্টি করে এবং সে চাপ প্রতিহত করতে গেলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সৃষ্ট ঘর্ষণে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয় সে উত্তাপে নতুন শক্তির জন্ম হয় এবং পুরনো শক্তির বিলুপ্তি ঘটে। এটি প্রকৃতির অমোঘ বিধান, যা থেকে কারও মুক্তি নেই। ঘর্ষণে উত্তাপ তৈরি হবেই এবং সে উত্তাপে নতুন সৃষ্টি হবেই, যা পুরাতনের ধ্বংস বা পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবেই। এর থেকে মুক্তি পেতে যথাসম্ভব ঘর্ষণ পরিবেশ পরিহার করে উত্তাপ সৃষ্টি বন্ধ রাখতে হবে যাতে নতুন শক্তির জন্ম হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। তাহলে শক্তির ভারসাম্য এবং অবস্থানের প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।
বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো বিগত ১৪ বছরে কোনো বিরোধী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো ঘর্ষণ হতে দেয়নি। ফলে পরিবর্তনের জন্য বাইরে বা ভিতরে কোনো প্রতিপক্ষ মাথা চাড়া দিতে পারেনি। একইভাবে বিরোধী দলের ব্যর্থতা হলো, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কোনো কার্যকর ঘর্ষণ করতে না পারা। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘর্ষণে বিরোধী পক্ষ সরাসরি লাভবান না হলেও হয়তো পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারত। বিরোধী দল মনে হয় তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। ফলে ক্ষমতাসীনের সঙ্গে ঘর্ষণ সৃষ্টিতে তৎপর হওয়ার লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে। যদি শক্তিশালী ঘর্ষণ সৃষ্টি করা যায় তাহলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তবে তেমন কোনো শক্তিশালী ঘর্ষণ সৃষ্টি করা যাবে কি না বা করতে দেওয়া হবে কি না তা স্পষ্ট হবে আগত দিনের রাজনীতিতে। তবে ক্ষমতাসীনরা তাদের অবস্থানে খুবই পরিষ্কার ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মনে হয় উত্তাপ সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ ক্ষমতাসীনরা হতে দেবে না। ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টি করার আগেই বিরোধী শিবিরেই সংঘাত লাগিয়ে দেবে। সেই লক্ষ্যে নতুন করে বিএনপি ও জামায়াত ইস্যুকে চাঙা করার চেষ্টা হচ্ছে।
বিএনপি ও জামায়াত দুটিই আওয়ামী লীগের মতো পারস্পরিক সাংঘর্ষিক শক্তি। এদের মধ্যে কখনই ঐক্য হতে পারে না। যে-কোনো ঐক্য তাদের উভয়ের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে ফেলবে। আজ এ দুই দলের যে হালহকিকত তার মূল কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, তাদের অনৈতিক ও আদর্শচ্যুত তথাকথিত ঐক্য। জামায়াতে ইসলামী তাত্ত্বিক বিচারে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামের আদর্শের বাইরে যার কারও সঙ্গে আঁতাত বা ঐক্য হতে পারে না। যদি হয় তাহলে তা হবে অনৈতিক ও ইসলামের প্রতি অবমাননা। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য ছিল অনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা। বিএনপির সঙ্গে আঁতাত বা ঐক্য করে জামায়াত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসিতে জীবন দিতে হয়েছে। জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে। জামায়াত নেতা-কর্মীরা যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে গেছেন। জামায়াত প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে পারে না। এমনকি জামায়াতের নামে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানও করতে পারে না। জামায়াতের এ অবস্থা কখনই হতো না, যদি জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আঁতাত বা ঐক্য না করত। জামায়াত আজ সবচেয়ে শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রাজনীতির মাঠে দাবড়িয়ে বেড়াত। সবাইকে জামায়াতের তোয়াজ করতে হতো। কিন্তু জামায়াতের কিছু নেতার লোভ, ক্ষমতার লালসা, অনৈতিক অবস্থান ও আদর্শহীন রাজনীতি জামায়াতকে ধ্বংসের পথে নিয়ে এসেছে। তখন জামায়াতের ওইসব নেতার ক্ষমতালিপ্সা এত ছিল যে, তাঁরা ১৯৯৫ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য ভেঙে আওয়ামী লীগকে মদদ জুগিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার ভাগ না দেওয়ায় জামায়াত ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলল। জাতিকে কলঙ্কিত ও পরাজিত করে মন্ত্রী হলো, শহীদের রক্তে ভেজা পতাকা তাদের কবজায়িত হলো। কিন্তু তার জন্য জামায়াতকেও দিতে হয়েছে রক্ত যা এখনো দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত ঐক্য উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ১৯৭২ থেকে ’৭৫-এ চরম বিপর্যয়কালেও জামায়াত এত প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েনি; কিন্তু ২০০৮-উত্তর রাজনীতিতে জামায়াত অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
একইভাবে বিএনপিকে জিয়া-উত্তর রাজনৈতিক বিপর্যয়ে এত সংকট মোকাবিলা করতে হয়নি, যা তাদের ২০০৬-উত্তর রাজনীতিতে সামাল দিতে হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতকে একসঙ্গে একই অস্ত্রে মোকাবিলা করার সুযোগ করে দিয়েছে এই বিতর্কিত ঐক্য, যা বিএনপি ও জামায়াতের জন্য শুভ কোনো কিছু নিয়ে আসেনি। তাই অনেক বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীর মত হলো, এ ঐক্য চিরদিনের জন্য পরিত্যাগ করাই হবে উত্তম। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে বিএনপি যে মহাভুল করেছে তার খেসারত দলটি আজও দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসে উদার গণতান্ত্রিক ও ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তির সাহায্য নেওয়া তার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত না করলে আজ বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির অপবাদ শোনার সুযোগ সৃষ্টি হতো না, জিয়াউর রহমানকে কেউ রাজাকার বলে গালি দেওয়ার সাহস পেত না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করা হলো, সেই জামায়াত ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগকে মদদ জুগিয়েছে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। ২০০১-২০০৬ সালের সরকারের যে অপবাদ বিএনপিকে শুনতে হচ্ছে বা যার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে, তার জন্য মূলত দায়ী জামায়াতের সঙ্গে অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয় আঁতাত। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে বা পরে জামায়াতকে সরকারে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অথচ আজ দেশমাতা খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার সাজার প্রতিবাদের আন্দোলনে কোথাও বিএনপির পাশে জামায়াত নেই। অথচ জামায়াতের সঙ্গে তথাকথিত ঐক্য নিয়ে অনেকে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিএনপি ও জামায়াতের ঐক্য ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কূটকৌশল। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বিপক্ষে এ দুই ভাগে জনগণকে বিভক্ত করতে চায়। জামায়াত বিএনপির পক্ষে থাকলে এ বিভক্তি খুবই স্পষ্ট ও সরলীকরণ করা যায়। যেহেতু জামায়াত চিহ্নিত ও সুস্পষ্ট মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, কাজেই তাদের সঙ্গে যাদের আঁতাত তারাও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এ সহজ সমীকরণ পরিষ্কারভাবেই করা যায়। তা ছাড়া কেউ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে না বলে স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে বলে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে ভারতবিরোধী একটি রং ছড়াতে চায়। এটিও প্রকারান্তরে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান আড়াল করার সূক্ষ্ম অপচেষ্টা হিসেবেই অনেকে বিবেচনা করেন। কিন্তু এর দায়ভার বিএনপিকেই বহন করতে হয়। বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া উদার, মধ্যপন্থি, ইসলামী চেতনা ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি আধুনিক রাজনৈতিক দল। সেখানে অন্য জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী কারও সঙ্গে আঁতাত বা ঐক্য দেশে ও বিদেশে ভুল বার্তা দিতে পারে। তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। ক্ষমতাসীনদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে নতুন প্রজন্মকে তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করতে। অতি স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নতুন প্রজন্মের আবেগ ও আগ্রহ অনেক উচ্চমাত্রার ও ভাবাবেগপূর্ণ হবে। তখন সেখানে যদি দৃশ্যমান ও প্রমাণিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো ব্যক্তি বা দল থাকে, তাহলে তাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বানিয়ে ফেলা অনেক বেশি সহজ রাজনৈতিক চাল। সে চালে যদি কেউ জেনেশুনে পা ফেলে তাহলে সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মূল্য তো তাদেরই দিতে হবে।
পরিশেষে বলব, জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকারের সঙ্গে কারও আপত্তি থাকতে পারে না। জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার সমুন্নত রাখা ও নিশ্চিত করা আমার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত বা ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতার বিপক্ষে আমার অবস্থান থাকবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, জামায়াতকে তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সব ধরনের ঐক্য বা আঁতাত থেকে দূরে থাকাই হবে জামায়াতের জন্য উত্তম রাজনীতি।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ।। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন